আমাদের দেশে সাপ সম্পর্কে অনেক কথাই প্রচলিত আছে।এদেরে মধ্যে সবচেয়ে বড় ধারণা হলো এই যে সাপের মাথায় মণি থাকে। এটাকে নাগমণি বলা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ লোকেরাই এগুলো বিশ্বাস করেন না। তবে অনেকেই এতে বিশ্বাসী। আবার বিভিন্ন জায়গায় আমরা এই নাগমণির ব্যাপারে পড়ে বা শুনে এসেছি। এমনকি হাজার হাজার বছর ধরে এটির উল্লেখ করা হয়েছে।
নাগমণি মূলত বিষধর নাগ সাপের মহা মূল্যমান রত্ন। এটার ব্যাপারে জানা গেছে, যিনি এই মণি লাভ করেন তার ভাগ্য বদলে যায়। নাগমণির ব্যাপারে বলা হয় যে এটি থেকে উজ্জল একটি আলোক রশ্মি বের হয় যা যে কারো চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। এর উজ্জলতার সামনে হীরের উজ্জলতাও নাকি ফিকে পড়ে যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে এমন কিছু মানুষ দাবি করেছেন যে, তারা নাগমণি দেখেছেন। তাদের মতে, শুধুমাত্র বিশেষ ধরণের সাপের মাথায় এই মণি দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া ভারতের একটি অন্যতম ধর্মগ্রন্থ বৃহৎ সঙ্গীতাতে এই নাগমণির উল্লেখ রয়েছে। এই ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী জগতে মণিধারী নাগ বর্তমান আছে। এসব নাগ খুবই দুর্লভ। নাগমণি অন্য যেকোনো মণির থেকে অনেক বেশি প্রভাবশালী, মূল্যবান এবং অলৌকিক। বলা হয়ে থাকে, এই মণিটি যার কাছে থেকে থাকে তার উপরে সাপের বিষের কোনো প্রভাব পড়ে না। আর ওই ব্যক্তিটি সর্ব রোগ মুক্ত থাকেন।

জ্যোতিষশাস্ত্রবিদ বরাহমিহিরের কথা অনুযায়ী, যার কাছে এই মণি থাকতো তারা শত্রুদের উপর সদা বিজয়ী থাকতেন অথবা ওই রাজাদের রাজ্যে ঠিক সময় বর্ষা হতো এবং প্রজারা সুখে জীবন যাপন করতো।
বলা হয়, যখন একটি নাগ সাপের আয়ু ১০০বছর হয়ে যায় তখন তার মধ্যে নাহমণি বিকশিত হতে থাকে। আর এই মণিটি ধারণ করার পর ওই নাগ সাপটি যেকোনো রুপ ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ ওই সাপটি ইচ্ছাধারী নাগে পরিণত হয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত ওই সাপটির কাছে মণিটি থাকে তার মৃত্যু হতে পারে না। তবে যদি মণিটি সাপ থেকে আলাদা করে দেয়া হয় তাহলে তৎক্ষণাক সাপটির মৃত্যু ঘটে।
এখন প্রশ্ন এটাই যে, সাপের মধ্যে এই মণিটি কীভাবে বিকশিত হয়। এ প্রসঙ্গে বলা হয়ে থাকে, যদি কোনো নাগ সাপের আয়ু ১০০ বছর হয়ে যায় তখন সাপের বিষগ্রন্থির বিষ গাঢ়ো হয়ে উজ্জল রামধনু রঙের রত্নে পরিণত হয়। আরি এটি শিকার ধরার জন্য ব্যবহৃত হয়।
প্রফেসর হেনচোয়ার্ড নামের এক বিজ্ঞানী যিনি ব্যক্তিগতভাবে শ্রীলঙ্কাতে প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে নাগমণির উপর পরীক্ষা নিরিক্ষা করেছিলেন। তিনি নাগমণির কিছু টুবরোর উপর পরীক্ষা করে পান যে নাগমণি ক্লোরোফেন নামক একটি খনিজ থেকে তৈরি। কিছু ধরণের প্রাকৃতিক ক্লোরোফেনকে যদি গরম করা হয় তাহলে এই ক্লোরোফেন কিছু সময় ধরে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাতে পারে।
কিছু সাধারণ মানুষ মনে করে থাকেন যে, নাগমণি সাপের মাথায় অবস্থান করে। একটি তাদের এ ধারণা পুরোপুরি ভুল। আবার কিছু মানুষ দাবি করেন নাগমণি কালো রঙের হয়। কিন্তু আসলে সেটি মণি নয়। ওই কালো পাথরটি বিষধর সাপের মধ্যেই বিকশিত হয়, আর এটা সাপের মাথার পিছনের দিকে থাকে। যদিও এর কিছু অলৌকিক শক্তি থাকে বলে জানা গেছে। সাপুড়েরা সর্বদা এই পাথরটির ব্যবহার করে থাকেন। তাই নাগমণিকে শুধুমাত্র কল্পনা ভেবে নেয়া আমাদের ভুল হবে।
No comments:
Post a Comment